৮ মাস পর মায়ের কোলে ফিরলো শিশু ইমরান

বার্তাসেন্টার সংবাদদাতা

শনিবার, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ২১:৩৭

দীর্ঘ আট মাস পর মায়ের কোলে ফিরে এলো শিশু ইমরান। চার বছর বয়সী ইমরান অপহরণ হওয়ার পর এই আট মাসে তার মাকে ভুলে গেছে। বাবা কে তাও তার মনে নেই। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ওয়ারী বিভাগের টিম ইমরানকে উদ্ধার করে মিন্টো রোডের অফিসে নিয়ে আসে। সেখানে মা রাশিদা বেগমকে দেখে চিনতে পারে না।

৮ মাস পর মায়ের কোলে ফিরলো শিশু
৮ মাস পর মায়ের কোলে ফিরলো শিশু ইমরান

রাশিদা বেগম ছেলেকে দেখতে পেয়ে চিৎকার করেন। শিশু ইমরান তার নামটা বলতে পারে না। অপহরণকারীদের দেওয়া নাম অনুযায়ী নিজের নাম বলে মাহফুজ। তার মা, দাদী ও পরিবারের সদস্য কাউকে চিনতে পারে না। মা রাশিদা বেগম হাউমাউ করে কাঁদছেন। বলছেন, আমি তোর মা। আমার বুকে আয়। মা ইমরানকে কোলে জড়িয়ে ধরে চুমু দিতে লাগলেন।

অপহৃত শিশু ইমরানকে উদ্ধার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে গতকাল কুমিল্লা থেকে ইসমাইল হোসেন ওরফে জীবন ওরফে আকাশকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ডিবি বলছে, ইসমাইল মূলত একজন প্রতারক। তিনি একাধিক ছদ্মনাম ব্যবহার করতেন। অবশেষে ডিবির জালে তিনি আটকা পড়েন। নিজের ছেলে পরিচয়ে শিশু ইমরানকে টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দিয়েছিল ইসমাইল।

শনিবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবির ওয়ারী বিভাগের ডিসি আশরাফ হোসেন এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, দীর্ঘ ৮ মাস পর মায়ের কোলে ফিরে আসায় শিশুটি তার সঠিক নামটা বলতে পারেনি এবং তার মা, দাদি ও পরিবারের সদস্য কাউকে চিনতে পারেনি। মা সন্তানকে চেনে কিন্তু সন্তান মাকে চিনতে পারেনি। অবশেষে নাড়ির টানে যখন শিশুটির মা তাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করলো তখন শিশুটিও তার মাকে কাছে পেয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে কান্না শুরু করে।

ডিবি কর্মকর্তা আশরাফ বলেন, ডিবি পুলিশের ছায়া তদন্তের মাধ্যমে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে দীর্ঘ ৮ মাস পর বিক্রি হওয়া শিশু ইমরানকে উদ্ধার করা হয়। মামলাটি তদন্তকালে আমরা জানতে পারি, শিশুটির নানী হামিদা খাতুন রাজধানীর দক্ষিণখানের জামতলা এলাকায় মেয়ে রাশিদা খাতুনকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন। রাশিদা বাসা বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করেন। ৬ বছর পূর্বে রাশিদার সঙ্গে মাজারুল ইসলামের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের দুই বছর পর তার পুত্র সন্তান ইমরানের জন্ম হয়। সন্তান জন্মের তিনমাস পর তার স্বামী যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। পার্শ্ববর্তী বাসার ভাড়াটিয়া আসামি ইসমাইল রাশিদাকে বিভিন্নভাবে উত্যক্ত করে এবং অনৈতিক প্রস্তাব দেয়। অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তার সন্তান ইমরানকে আট মাস আগে অপহরণ করে অন্য জায়গায় বিক্রি করে দেয়।

আরও সংবাদ পড়ুন: প্রথম বিয়ের কথা জেনে ফেলায় দ্বিতীয় স্ত্রীকে হত্যা।

তিনি আরও বলেন, আসামি ইসমাইল অসৎ উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সময় চকলেট ও চিপস কিনে দিয়ে শিশুটির সঙ্গে ঘনিস্ট হওয়ার চেষ্টা করত। এক পর্যায়ে শিশুটির মা বাড়িতে না থাকায় কৌশলে গত বছরের ১৫ জুন শিশু ইমরানকে বাসা থেকে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায় ইসমাইল। এরপর অনেক খোজ করে ইমরানের সন্ধান না পাওয়ায় ভিকটিমের মা রাশিদা পাগল প্রায় হয়ে যায়। ইমরানকে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করে। এরপর তিনি আসামি ইসমাইলকে সন্দেহ করেন এবং তার মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে। রাশিদা আসামির সঙ্গে ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করলে আসামি ইসমাইল জানায় তার ছেলেকে কাগজপত্র করে বিক্রি করে দিয়েছে। তার ছেলেকে পাওয়ার জন্য বিভিন্ন সময় আাসামির সঙ্গে যোগাযোগ করলে সে অনৈতিক প্রস্তাব দিত এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতো।

রাশিদা ছেলেকে ফিরে পাওয়ার জন্য দীর্ঘ ৮ মাস ধরে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেও তার অপহৃত ছেলেকে উদ্ধার করতে পারেনি। রাশিদা ও তার পরিবারের লেখাপড়া না থাকায় এবং কারো কাছ থেকে সঠিক পরামর্শ না পাওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে তার ছেলেকে উদ্ধারের বিষয়ে কোনো আইনগত পদক্ষেপ নিতে পারেনি। সন্তান হারানো মায়ের আহাজারিতে যখন আকাশ বাতাস ভারী হয় তখন বিষয়টি ডিবির দৃষ্টি গোচরে আসে। আমরা দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করি এবং অপহরণকারী ইসমাইলকে কুমিল্লা থেকে গ্রেফতার করি। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নেত্রকোনার পূর্বধলা থানার যাত্রাবাড়ী গ্রাম থেকে শিশু ইমরানকে উদ্ধার করা হয়। নিজের ছেলে পরিচয় দিয়ে শিশু ইমরানকে কাগজপত্রের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়েছিল। ইসমাইলের বিরুদ্ধে ডিএমপির দক্ষিণখান থানায় মামলা করা হয়েছে।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *