পার্লামেন্টে ক্ষমা চাইলেন বরিস জনসন

বার্তাসেন্টার সংবাদদাতা

মঙ্গলবার, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৭:৫৭

ব্রিটেনে লকডাউনের সময়ে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে পার্টির অভিযোগ নিয়ে বহু প্রত্যাশিত তদন্ত-রিপোর্ট জমা দিয়েছে এ সংক্রান্ত তদন্ত কমিটি। প্রতিবেদনে বরিস জনসন সরকারের ‘নেতৃত্বের ব্যর্থতা’র কড়া সমালোচনা করেছেন আমলা সু গ্রে। এরপরই লকডাউনের সময়ে ডাউনিং স্ট্রিটের ঘটনা নিয়ে পার্লামেন্টে ক্ষমা চাইলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। তবে তাতে বিরোধীদের আক্রমণের ধার কমল না। বরিসের পদত্যাগের দাবিতে অনড় তারা।

বরিস জনসন

লকডাউনের সময়ে ডাউনিং স্ট্রিটে করোনাবিধি ভেঙে পার্টির অভিযোগে বিপাকে পড়েন বরিস জনসন। তিনি পদত্যাগ করতে পারেন বলেও জল্পনা শুরু হয়। সু গ্রে’কে তদন্তের ভার দেন জনসন। পরে ১৬টি ঘটনার মধ্যে ১২টি ঘটনার তদন্ত শুরু করে লন্ডন পুলিশও। ফলে সু গ্রে’র রিপোর্টে ওই ১২টি ঘটনা নিয়ে সম্পূর্ণ তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।

রিপোর্টে গ্রে জানিয়েছেন, এই পার্টিগুলোর ক্ষেত্রে ব্রিটিশ সরকারের শীর্ষ স্তরে কর্মরত ব্যক্তিদের যে শৃঙ্খলা মেনে চলা উচিত তা মানা হয়নি। এমনকি সাধারণ ব্রিটিশ নাগরিকদের সেই সময়ে যে শৃঙ্খলা মেনে চলার কথা তা-ও না। নেতৃত্বের উচিত ছিল কিছু কিছু ক্ষেত্রে পার্টির অনুমতিই না দেওয়া। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পার্টি যেদিকে গড়িয়েছে সেদিকে গড়াতে দেওয়া উচিত হয়নি। যেকোনও পেশাদারি কর্মক্ষেত্রের সঙ্গে তুলনা করলে ওই পার্টিগুলোতে অতিরিক্ত মদ্যপান হয়েছিল বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। গ্রে জানান, ডাউনিং স্ট্রিটের কয়েকজন কর্মী বিষয়টি নিয়ে তাদের উদ্বেগ জানানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু শীর্ষ নেতৃত্বকে জানাতে পারেননি।
গ্রে’র মতে, বরিস সরকারের নেতৃত্বের কাঠামো ‘জটিল’। ফলে অনেকেই দায় এড়াতে পারেন। ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের বাগানে একাধিক পার্টির অভিযোগ উঠেছে। গ্রে জানান, করোনার সময়ে বৈঠকের জন্য খোলামেলা স্থান হিসেবে বাগানটিকে ব্যবহার করেছিলেন কর্মীরা। কিন্তু সেজন্য স্পষ্টভাবে কোনও অনুমতি দেওয়া হয়নি। গ্রে’র বক্তব্য, “ঘটনাগুলো থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত। এ নিয়ে সরকারের বিভিন্ন দফতরে এখনই পদক্ষেপ প্রয়োজন।”

গ্রে যে পার্টিগুলো নিয়ে তদন্ত করেছেন সেগুলোর মধ্যে রয়েছে খোদ দেশটির প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের ফ্ল্যাটে হওয়া একটি পার্টি সংক্রান্ত অভিযোগও। ১৩ নভেম্বর ওই পার্টি হয়। সেদিনই পদত্যাগ করেন জনসনের উপদেষ্টা ডমিনিক কামিংস।

সংবাদমাধ্যমের একাংশের মতে, ওই পার্টির আয়োজন করেছিলেন বরিসের স্ত্রী ক্যারি। ক্যারি কামিংসকে খুব একটা পছন্দ করতেন না বলেও দাবি সংবাদমাধ্যমের। তবে জনসনের দাবি, তার ফ্ল্যাটে কোনও পার্টি হয়নি। রিপোর্ট প্রকাশের পরে পার্লামেন্টে বরিস জনসন বলেন, “ডাউনিং স্ট্রিটের ঘটনার জন্য ক্ষমা চাইছি। এখন আর বলে লাভ নেই যেকোনও কাজ বিধি মেনেই করা হয়েছিল বা অনেকে কঠোর পরিশ্রম করছিলেন।”

আরও পড়ুন: থাইল্যান্ডে এক বাড়িতে ৮ বউকে নিয়ে সংসার করছেন এক ব্যক্তি।

গ্রে’র সুপারিশ মেনে ডাউনিং স্ট্রিট ও ক্যাবিনেট অফিসের কাজকর্মে পরিবর্তন আনা হবে বলে জানান তিনি। বরিস জনসন জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর আলাদা অফিস তৈরি হবে। পুনর্বিবেচনা করা হবে সিভিল সার্ভিসের কার্যবিধি। সরকারের কাজকর্মে উন্নতির জন্য আরও কিছু পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

কিন্তু বিরোধী লেবার পার্টির নেতা কেয়ার স্টার্মারের বক্তব্য, “প্রধানমন্ত্রীর কোনও লজ্জা নেই। তাই তিনি পদত্যাগ করছেন না। মহামারীর সময়ে দেশবাসী বিপুল আত্মত্যাগ করেছেন। এখন তারা ক্রুদ্ধ। কারণ, তারা বিধি মেনে চলেছেন। অনেকে প্রিয়জনদের সঙ্গেও দেখা পর্যন্ত করছেন না।”

স্টার্মারের বক্তব্য, “প্রধানমন্ত্রী আমাদের সকলকে বোকা ভেবেছেন। তার সততা নেই। তাই তিনি পদত্যাগ করবেন না।”

স্টার্মারের মতে, কয়েকজন আমলাকে সরানো হতে পারে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করবেন না।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *