বিএনপির সমাবেশ: যশোর থেকে খুলনাগামী বাস বন্ধ, ভোগান্তিতে যাত্রীরা

বার্তাসেন্টার সংবাদদাতা

শুক্রবার, ২১ অক্টোবর ২০২২, ২১:৪৮

খুলনায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের আগের দিন শুরু হয়েছে দুই দিনের ‘পরিবহন ধর্মঘট’। এ কারণে যশোর থেকে খুলনাগামী আন্তঃজেলা বাসসহ সব ধরনের যাত্রীবাহী বাস বন্ধ রেখেছেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। তবে যশোর থেকে খুলনাগামী যাত্রীবাহী বাস বন্ধ থাকলেও বাকি ১৯ টি রুটে সব পরিবহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।

বাস বন্ধ

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রুটগুলোর যাত্রীবাহী বাসের শেষ গন্তব্যস্থান হলো খুলনার সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল। তবে শনিবার খুলনায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের জন্য দুইদিনের ‘পরিবহন ধর্মঘটের’ কারণে খুলনার টার্মিনালগুলোতে প্রবেশ করতে পারছে না যাত্রীবাহী বাসগুলো। ফলে এই অঞ্চলের রুটগুলোর যাত্রীবাহী বাস থেমে জড়ো হচ্ছে যশোর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে। দূর-দূরান্ত থেকে যাত্রীরা খুলনায় যেতে না পেরে ভোগান্তিতে পড়েছে। অনেককেই নিজ গন্তব্যে না যেতে পেরে যশোর থেকে ফিরে যেতে হচ্ছে। আবার অনেকেই সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহনে গন্তব্যে যাচ্ছেন।

বাসটার্মিনালের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যশোর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে ২০টি রুটে বাস চলাচল করে। শুক্রবার সকাল থেকে যশোর থেকে খুলনাগামী কোনো বাস চলেনি; এমনকি খুলনা থেকেও কোনো বাস যশোরে ছেড়ে আসেনি। তবে বাকি ১৯ রুটের বাস যশোর টার্মিনালে নিয়মিত আসছে এবং নির্দিষ্ট সময় শেষে খুলনা ছাড়া সকল রুটে ছেড়ে যাচ্ছে।

পরিবহন শ্রমিকরা জানান, আগামীকাল (শনিবার) খুলনায় বিএনপির গণসমাবেশ থাকায় যশোর থেকে খুলনাগামী বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। কি কারণে বাস চালানো বন্ধ রয়েছে তা তারা বলতে পারেন না।

যশোর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ছেড়ে আসা খুলনাগামী যাত্রীবাহী পরিবহন যশোর বাস টার্মিনালে এসে থেমে যাচ্ছে। কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়াই মানুষকে বাস থেকে যশোরে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে যাত্রীদের। যাত্রীদের অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে ইজিবাইক বা নছিমনে করে যেতে হচ্ছে। মানুষের যেন ভোগান্তির শেষ নেই।

যশোর থেকে খুলনাগামী বেসরকারি এক এনজিএ কর্মী হুমায়ুন কবিরকে তার ৬ মাস ও ৬ বছর বয়সী মেয়েসহ স্ত্রীকে নিয়ে যশোর বাসটার্মিনালে বসে থাকতে দেখা যায়। তিনি বলেন, শুক্রবার ও শনিবার ছুটি থাকায় স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে খুলনার বয়রায় গ্রামের বাড়ি যাচ্ছিলাম। যশোর টার্মিনালে এসে দেখি বাস চলাচল বন্ধ। শুনেছিলাম খুলনার সঙ্গে বাস চলাচল বন্ধ থাকবে; তবে এ রুটে সব বাস বন্ধ থাকবে সেটা জানতাম না। বাস না পাওয়ায় আর গ্রামের বাড়ি যাওয়া হলো না। কর্মস্থলের কোয়ার্টারে চলে যাচ্ছি।

বিপ্লব বিশ্বাস নামে আরেক যাত্রী বলেন, অভয়নগর উপজেলা থেকে সকালে সমাজসেবা অধিদপ্তরে চাকরির নিয়োগ পরীক্ষা দিতে যশোর শহরে এসেছি। পরীক্ষা শেষে বাড়িতে ফেরার জন্যে দুপুরে বাস টার্মিনালে এসে দেখি খুলনা রুটে কোনো বাস চলছে না। বড় ধরনের সংকটে পড়েছি। কারণ ইজিবাইকে কেটে কেটে যেতে গেলেও ভাড়া লাগছে বাসের চেয়ে দুই থেকে তিনগুণ বেশি। আবার তা পাওয়াও যাচ্ছে না। রাজনৈতিক সমাবেশের কারণে সাধারণ মানুষের এই ভোগান্তি দেওয়ার কোনো মানে হয় না।

খুলনা-চুয়াডাঙ্গা লাইনের শাপলা পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার সবদুল শেখ বলেন, যশোর থেকে ১৬ রুটে বাস চলাচল করছে। শুধু যশোর থেকে খুলনায় কোনো বাস চলাচল করছে না। বিএনপির সমাবেশের কারণে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।

যশোর খুলনা পরিবহন রুটের যশোর টার্মিনালের সময় নিয়ন্ত্রক মাছুম চৌধুরী বলেন, মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। বাস বন্ধ হওয়ায় অফিসে বসে মানুষের ভোগান্তি দেখছি; তবে আমাদের কিছু করার নেই।

যশোর আন্তঃজেলা বাস সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক পবিত্র কাপুড়িয়া বলেন, সরকারের কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। খুলনার সমাবেশকে কেন্দ্র করে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সেই কারণে আমরা নিজেরাই খুলনাগামী সকল রুটে বাস বন্ধ রেখেছি। এমনকি বিএনপির নেতা-কর্মীদেরও বাস ভাড়া দিচ্ছি না।

যশোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সৈয়দ সাবেরুল হক বলেন, যশোরের কোনো বাস বা মাইক্রোবাস আমাদের কাছে ভাড়া দিচ্ছে না। এ বিষয়ে আমরা পরিবহন মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের অনেকে বলেছেন, সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

বিএনপি নেতারা জানান, যশোর থেকে প্রায় ১০ হাজার নেতাকর্মীর খুলনার সমাবেশে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। বৃহস্পতিবার এক হাজারের মতো নেতা-কর্মী খুলনা শহরে পৌঁছে গেছে।

যশোর শহরের বিএনপির একজন কর্মী বলেন, খুলনাতে যাওয়ার কোনো যানবাহন পাচ্ছি না। শেষমেষ কিছু না পেলে মোটরসাইকেলে চড়ে যাব। সেখানেও বাধা পেলে পায়ে হেঁটে চলে যাব।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *