১৩ ডিসেম্বর সারা দেশব্যাপী বিএনপির গণমিছিল ও বিক্ষোভ

বার্তাসেন্টার সংবাদদাতা

শনিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২২, ১৯:২৬

রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশি অভিযান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে আগামী মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) দেশব্যাপী বিএনপির গণমিছিল ও বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা।

বিএনপির গণমিছিল ও বিক্ষোভ

আজ শনিবার (১০ ডিসেম্বর) রাজধানী ঢাকার গোলাপবাগ মাঠে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ থেকে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়। এছাড়া আগামী ২৪ ডিসেম্বর যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচি করা হবে বলেও সমাবেশ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে।

গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতাকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন বিকেল ৪টার দিকে।

খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকার আজকের গণসমাবেশে বাধা দেওয়ার জন্য নানান ষড়যন্ত্র করেছে। আমাদের সাড়ে চারশোর বেশি নেতা-কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। তবে সব বাধা-বিপত্তি মোকাবিলা করে আজকের ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ সফল হয়েছে।

সমাবেশ থেকে সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দাবিসহ ১০ দফা ঘোষণা করেছে বিএনপি।

বিএনপির ১০ দফা হলো-

১. বর্তমান জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করে ক্ষমতাসীন সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।
২. ১৯৯৬ সালে সংবিধানে সংযোজিত ধারা ৫৮-খ, গ ও ঘ’-এর আলোকে একটি দল নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার/অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন।

৩. নির্বাচনকালীন দল নিরপেক্ষ সরকার/অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্ববধায়ক সরকার বর্তমান অবৈধ নির্বাচন কমিশন বাতিল করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন, উক্ত নির্বাচন কমিশন অবাধ নির্বাচনের অনিবার্য পূর্বশর্ত হিসাবে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করতে আরপিও সংশোধন, ইভিএম পদ্ধতি বাতিল ও পেপার ব্যালটের মাধ্যমে ভোটের ব্যবস্থা করা এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার বাতিল করা।

৪. খালেদা জিয়াসহ সব বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মী, সাংবাদিক এবং আলেমদের সাজা বাতিল, সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও রাজনৈতিক কারাবন্দীদের অনতিবিলম্বে মুক্তি, দেশে সভা, সমাবেশ ও মত প্রকাশে কোনো বাধা সৃষ্টি না করা, সব দলকে স্বাধীনভাবে গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে প্রশাসন ও সরকারি দলের কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ বা বাধা সৃষ্টি না করা, স্বৈরাচারী কায়দায় বিরোধী কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করার লক্ষ্যে নতুন কোনো মামলা ও বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার না করা।

৫. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এবং বিশেষ ক্ষমতা আইন-১৯৭৪সহ মৌলিক মানবাধিকার হরণকারী সব কালা-কানুন বাতিল করা।
৬. বিদ্যুৎ, জ্বালানি, গ্যাস ও পানিসহ জনসেবা খাতের মূল্যবৃদ্ধির গণবিরোধী সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিল।

আরও পড়ুন: আদালতে মির্জা ফখরুল ইসলাম ও মির্জা আব্বাস।

৭. নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনা, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারকে সিন্ডিকেট মুক্ত করা।
৮. গত ১৫ বছর ধরে বিদেশে অর্থ পাচার, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত ও শেয়ার বাজারসহ রাষ্ট্রীয় সব ক্ষেত্রে সংঘটিত দুর্নীতি চিহ্নিত করতে একটি কমিশন গঠন/দুর্নীতি চিহ্নিত করে অতি দ্রুত যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ।

৯. গত ১৫ বছরে গুমের শিকার সব নাগরিককে উদ্ধার এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনার দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, উপাসনালয় ভাঙচুর এবং সম্পত্তি দখলের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা করা।
১০. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে সরকারি হস্তক্ষেপ পরিহার করে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেওয়া।

এদিকে বিএনপির ৭ এমপি সংসদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন এই গণসমাবেশ থেকে। দুপুর দেড়টার দিকে সমাবেশ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন তারা।

এর আগে, সকাল থেকে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশের মঞ্চে একে একে কেন্দ্রীয় নেতা-কর্মীরা আসা শুরু করেন। এর মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদীন ফারুক, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুন নবী খান সোহেল, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, রাজশাহীর সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু, ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনুকুল হাসান শ্রাবণসহ আরও অনেকে মঞ্চে উপস্থিত হয়েছেন। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আজিজুল বারী হেলাল।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *