সরকার সমাবেশে বাধা দিয়েও ঠেকাতে পারেনি: মির্জা ফখরুল

বার্তাসেন্টার সংবাদদাতা

রবিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২২, ২২:৪৫

২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতেই আওয়ামী লীগ নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে। আওয়ামী লীগ শক্তি প্রয়োগ করে ক্ষমতায় টিকে আছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মহাসচিব মির্জা ফখরুল

রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে আজ রোববার নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও বর্তমান প্রেক্ষাপট শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ সচেতন নাগরিক ফোরাম নামে একটি সংগঠন এর আয়োজন করে।

ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ এটা হঠাৎ করে বাতিল করেছে- তা নয়। সুদূরপ্রসারী চিন্তা থেকেই তারা এটা করেছে। আওয়ামী লীগকে কীভাবে ৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় রাখা যায় সেই নীল নকশার অংশ হিসেবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছে।

সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, তাদের দুঃশাসন সবকিছু ছাড়িয়ে গেছে। অতীতের সমস্ত শাসন ব্যবস্থাকে তারা ছাড়িয়ে গেছে। কলোনী আমলে বৃটিশ রুল, তারপরে পাকিস্তান রুল, সব কিছুকে ছাড়িয়ে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার তারা একটা দুঃশাসনে বাংলাদেশকে পুরোপুরিভাবে পঙ্গু করে ফেলেছে, ব্যর্থ করে ফেলেছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে সবাইকে বিশেষ করে তরুণ-যুব সমাজকে, তরুণ আইনজীবীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে চলমান সমাবেশে বাধা দিয়েও সরকার ঠেকাতে পারেনি বলেও এ সময় দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব।

গুলশানের ‘সিক্স সিজন’ হোটেলে বাংলাদেশ সচেতন নাগরিক ফোরামের উদ্যোগে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও বর্তমান প্রেক্ষাপট শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।

এই আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ সচেতন নাগরিক ফোরাম নামে গবেষণামূলক এই সংগঠনটির আত্মপ্রকাশ ঘটে। সংগঠনটির চেয়ারম্যান শাহরিয়ার আলম জর্জ এবং মহাসচিব সৈয়দ মোহাম্মদ আলভী।

সংগঠনের চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে ও উপদেষ্টা রফিকুল ইসলাম রফিকের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম, জহুরুল ইসলাম বাবু, পাবনা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের আরশেদ আলম, সচেতন নাগরিক ফোরামের এজেডএম মোরশেদ আল মামুন লিটন, আশরাফুর রহমান, এএইচ আবরার ফাহিম, আবদুল্লাহ জামাল চৌধুরী প্র্রমুখ বক্তব্য দেন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজনীয় তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, বিষয়টি আজকে এতটাই প্রাসঙ্গিক সবার দৃষ্টি সেদিকে। দেশের মানুষের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ ও তাদের অস্তিত্ব এ বিষয়টির ওপর ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আওয়ামী লীগ প্রথম এ দাবি জানিয়েছে। এ দাবি নিয়ে তারা ১৭৩ দিন হরতাল করেছে। তাদের যুক্তি ছিল দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না। তাই নির্বাচনকালীন বা অন্তর্বর্তীকালীন নিরপেক্ষ সরকার প্রয়োজন। সেই সময়ের বিএনপি সরকার উপলব্ধি করেছিল দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির কারণে এটা জরুরি। তাই সংবিধানে এ বিধানটি যুক্ত করে।

তিনি বলেন, দেশে অস্থিতিশীলতার জন্য ১/১১ হলো। তখন তাদের বড় বড় স্লোগান ছিল মাইনাস টু। আসলে এটা ছিল মাইনাস ডেমোক্রেসি-গণতন্ত্রকে দূরে রাখো, নিয়ন্ত্রিত একটা শাসন ব্যবস্থা এখানে পরিচালনা করো। সেই একই সূত্র থেকে একই ষড়যন্ত্র থেকে একই চক্রান্ত থেকে পরবর্তিকালে এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করে আওয়ামী লীগ। কিন্ত আওয়ামী লীগ বা বিএনপির জন্য নয় জাতির ভবিষ্যৎ, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য এটা প্রয়োজন। যেদিন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করা হলো সেই দিনই সংবাদ সম্মেলন করে আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া বলেছিলেন, এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে চিরস্থায়ীভাবে একটা অস্থিতিশীলতা ও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করল, স্ট্যাবিলিটি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেল।

মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ সম্পূর্ণ জোর করে অবৈধভাবে ক্ষমতায় বসে আছে। আমি একটা কথা বলাতে ওরা ক্ষিপ্ত হয়ে গিয়েছিল। আমি বলেছিলাম পাকিস্তান আমলেও এত অত্যাচার নির্যাতন হয়নি। আমাকে ওরা পাকিস্তানের চর-টর বানিয়ে দিল। ওরা জিয়াউর রহমানকে পাকিস্তানের চর বলে, আমি তো ক্ষুদ্র মানুষ।

বিআরটি প্রকল্টের সমালোচনা করে তিনি বলেন, শুনলাম ওবায়দুল কাদের বলেছেন যে, বিআরটি (বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট) প্রকল্প এখন গলার কাটা হয়ে গেছে। এই কথা বলার আগে তার পদত্যাগ করা উচিত ছিল। কারণ এই প্রকল্প তারা নিয়েছেন। তারা ১০ বছর ধরে এই পুরো এলাকার মানুষ, পুরো নর্থ বেঙ্গলের মানুষ, পুরো ঢাকার মানুষকে তারা অসহ্য রকমের একটা যন্ত্রণা দিচ্ছেন যে, যন্ত্রণা কল্পনা করা যায় না।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালুর কারণ উল্লেখ করে মঈন খান বলেন, যেকোনো নাগরিক সুপ্রিম কোর্টে প্রশ্ন তুলতে পারেন- যেভাবে যে প্রক্রিয়ায় অবসর গ্রহণের পরে প্রধান বিচারপতি রায় পরিবর্তন করে যে কেয়ারটেকার পদ্ধতি বিলুপ্ত করা হয়েছে সেটা আইনসম্মত নয়। এটা আইনজীবীরা তুলতে পারেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে- সংবিধান লঙ্ঘন করে আমরা কেয়ারটেকার পদ্ধতিতে যেতে পারি কি না। আমার উত্তর হচ্ছে আমরা ১০০ ভাগ পারি। সেই উত্তরটি আমি বিভিন্ন রাষ্ট্রদূতকে দিয়ে থাকি। তারা যখন ব্যাখ্যা চান তখন আমি তার ব্যাখ্যাটি এভাবে দেই যে, সংবিধান হচ্ছে মানুষের জন্য, মানুষ সংবিধানের জন্য নয়।

সূত্র: ইত্তেফাক

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *