ভুয়া গ্রেফতারি পরোয়ানায় জামাই-শ্বশুরের ২২ দিন কারাভোগ

বার্তাসেন্টার সংবাদদাতা

বৃহস্পতিবার, ২৭ জানুয়ারি ২০২২, ১৯:০১

জাল ও ভুয়া গ্রেফতারি পরোয়ানায় ২২ দিন কারাগারে থাকার পর মুক্তি পেয়েছেন মঞ্জুরুল ইসলাম (৩২) ও শফিউল ইসলাম (৫৮) নামে দুজন কৃষক। ঢাকার নারী নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর আদালতে দায়ের হওয়া নারী নির্যাতন মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানায় গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর ক্ষেতলাল থানার পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে।

ভুয়া গ্রেফতারি পরোয়ানা

পরে আইনজীবীদের যুক্তিতর্কে ওই গ্রেফতারি পরোয়ানা জাল ও ভুয়া প্রমাণিত হয়। এরপর আদালতের নির্দেশে দীর্ঘ ২২ দিন কারাগারে থাকার পর ১৮ জানুয়ারি তারা মুক্তি পায়। একইসাথে আদালত জাল ও ভুয়া গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রস্তুত করার অপরাধ ও অপরাধে সহযোগিতার সাথে কে বা কারা জড়িত, সেই বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। সেই সাথে আগামী ৩০ কার্য দিবসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য গোয়েন্দা বিভাগের অফিসার ইনচার্জকে (ডিবি ওসি) নির্দেশ দিয়েছেন। নির্দেশ অনুযায়ী তদন্ত শুরু হয়েছে।

জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মহব্বতপুর সাখিদারপাড়ায় বাড়ি কৃষক শফিউল ইসলামের। তার জামাই মঞ্জুরুল ইসলামের বাড়িও একই গ্রামে। পেশায় তারা দুজনেই কৃষক। নারী নির্যাতনের অভিযোগে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ আদালতে ৯৯/২ আগারগাঁও তালতলা,শের-ই-বাংলা নগর ঢাকার তাহমিনা রহমান নামে এক নারী মামলা করেন।

মামলার এজাহারে আসামি করা হয় পাবনা সদরের চর প্রতাপপুর গ্রামের এম এ সামাদ বকুলকে। ওই মামলার বরাত দিয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ১১ (গ) ধারায় মঞ্জুরুল ও শফিউলের নাম-ঠিকানা সম্বলিত আদালতের জাল সিল ও বিচারকের জাল সাক্ষরযুক্ত পরোয়ানা প্রস্তুতকারী কোনো কর্মচারীর সাক্ষর বা নাম ও মোবাইল নম্বর যুক্ত কোনো সিল ছাড়াই ভুয়া গ্রেফতারি পরোয়ানা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ক্ষেতলাল থানায় আসে।

সেই পরোয়ানা মূলে গত ২৮ ডিসেম্বর রাতে মঞ্জুরুল ও শফিউলকে ক্ষেতলাল থানার পুলিশ তাদের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে। জামাই ও শ্বশুরের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের অভিযোগের কথা শুনে চমকে ওঠেন পরিবারসহ এলাকাবাসী। তারা পুলিশকে জানায় এ ঘটনায় তারা কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নয়। কিন্তু পুলিশ তাদের কোনো কথা না শুনে রাতে জামাই ও শ্বশুরকে থানায় নেয়।

পরের দিন ২৯ ডিসেম্বর আদালতে উপস্থাপন করলে, আদালতের বিচারক আতিকুর রহমান আদালতের পরোয়ানা মূলে তাদের জয়পুরহাট জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরে জয়পুরহাট হাজত থেকে গত ৭ জানুয়ারি তাদের ঢাকার কেরানীগঞ্জ জেল হাজতে পাঠানো হয়।

পরবর্তী সময়ে জয়পুরহাট চিফ জুুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে ঢাকা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল বিচারকের কাছে মামলার খণ্ড নথি পাঠানো হয়। ঢাকা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালত-২ এর বিচারক মামলাটির নথি পর্যালোচনা করে জাল ও গ্রেফতারি পরোয়ানা মূলে জেল হাজতে আটক শফিউল ইসলাম ও মঞ্জুরুল ইসলামকে রিলিজ দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে আদেশের অনুলিপি জয়পুরহাট মুখ্য বিচারিক আমলি আদালতে পাঠান। পরে মুখ্য বিচারিক আমলি আদালতের বিচারক মো. জাহাঙ্গীর আলম তাদের অব্যাহতির আদেশ দিলে দীর্ঘ ২২ দিন হাজত বাসের পর কেরানীগঞ্জ জেল হাজত থেকে গত ১৮ জানুয়ারি তারা বাড়ি ফেরেন।

আরও সংবাদ পড়ুন: শপথ শেষে হত্যা মামলায় চার ইউপি চেয়ারম্যানকে গ্রেফতার।

শফিউল ইসলাম বলেন, আমি কখনো ঢাকা যাইনি। অথচ মিথ্যা অভিযোগে আমাকে ঢাকার কেরানীগঞ্জ জেলখানায় নেওয়া হলো। আমার মান-সম্মান সব শেষ হয়ে গেল। আমাদের মতো আর যেন কোনো নির্দোষ ব্যক্তি ভুয়া গ্রেফতারি পরোয়ানায় হয়রানির শিকার না হয়। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচার চাই।

কৃষক শফিউলের মেয়ে মঞ্জুরুলের স্ত্রী সুমাইয়া আক্তার বলেন, নারী নির্যাতন মামলায় শ্বশুর-জামাই গ্রেফতার হওয়ার খবরে আমরা হতবাক হয়েছি। ঘটনাটি সামাজিকভাবে আমাদের হেয় প্রতিপন্ন করেছে। যে ভুলে আমাদের মান-সম্মান গেল, তার দায় কে নেবে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।

ক্ষেতলাল থানার ওসি নীরেন্দ্রনাথ মণ্ডল বলেন, গ্রেফতারি পরোয়ানামূলে শফিউল ইসলাম ও মঞ্জুরুল ইসলামকে গ্রেফতার করে আদালতে উপস্থাপন করা হয়। যেভাবে গ্রেফতারি পরোয়ানা থানায় আসার কথা সেভাবেই এসেছে।

জয়পুরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, পুলিশ গ্রেফতারি পরোয়ানাপ্রাপ্ত দুজনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে তাদের গ্রেফতারি পরোয়ানা জাল ও ভুয়া বলে নিশ্চিত হয়ে আদালত তাদের মামলা হতে অব্যাহতি দিয়েছেন। এই অপরাধের সাথে কারা জড়িত, সে বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ডিবি পুলিশ তদন্ত করছে।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *