চলে গেলেন ভারতীয় উপমহাদেশের সুরসম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর

বার্তাসেন্টার সংবাদদাতা

রবিবার, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ২২:১২

ভারতীয় উপমহাদেশের সুরসম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর ২৭ দিনের লড়াই শেষে করোনার কাছে হেরে গেলেন। রবিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮ টা ১২ মিনিটে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। ভারতের কোকিলকন্ঠী লতা মঙ্গেশকরের মৃত্যু সংবাদ নিশ্চিত করেছেন ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার এন সান্থানাম।

লতা মঙ্গেশকর
ভারতীয় উপমহাদেশের সুরসম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর

চিকিৎসক প্রতীত সামধানি জানান, মাল্টি অর্গ্যান ফেলিউরের জেরেই মৃত্যু হয় লতা মঙ্গেশকরের, কোভিড আক্রান্ত হয়ে প্রায় ২৭ দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি।

করোনা আক্রান্ত হওয়ায় গত ১১ জানুয়ারি তাকে মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। নিউমোনিয়াতেও আক্রান্ত ছিলেন তিনি। প্রথম থেকেই তাকে আইসিইউ-তে রাখা হয়েছিল। ৩০ জানুয়ারি শিল্পীর কোভিড নেগেটিভ রিপোর্ট আসে। কিন্তু বয়সজনিত নানা সমস্যার কারণে শেষ পর্যন্ত আর লড়তে পারলেন না তিনি।

এর আগেও সঙ্কটজনক অবস্থায় একাধিক বার হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছিল লতাকে। কিন্তু ভক্তদের আশ্বস্ত করে প্রত্যেকবারই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন।

১৯২৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর লতার জন্ম এক মারাঠি পরিবারে। মাত্র ১৩ বছর বয়সে বাবাকে হারান। তার আগে অবশ্য বাবার হাত ধরেই অভিনয় এবং গান শিখতে শুরু করে দিয়েছিলেন। ১৩-১৪ বছর বয়সেই মারাঠি ছবির মাধ্যমেই প্রথম সিনেমায় গান গাওয়া শুরু লতা। মুম্বাই যাওয়ার পর ১৯৪৮ সালে প্রথম হিন্দি গান করেন ‘মজবুর’ ছবিতে।

সুর ও সঙ্গীতের সুবিস্তৃত ভুবনে লতা মঙ্গেশকর এক আশ্চর্য বিস্ময়! তিনি ‘জীবন্ত কিংবদন্তি’ ছিলেন বললেও বোধ হয় তার সবটা প্রতিফলিত হয় না। ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ভারতীয় মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে ছিলেন প্রতিদ্বন্দ্বীহীন এক সঙ্গীতসম্রাজ্ঞী হয়ে!

তবে লতা মঙ্গেশকর আজীবন কুমারী থেকেছেন। বিয়ে করেননি। প্রেমকে নিজের জীবন থেকে দূরেই রেখেছিলেন তিনি। যদিও পৃথিবী জুড়ে তার ভালোবাসার মানুষের অভাব ছিল না।

পরিবারের জন্যই আজীবন সিঙ্গেল থেকেছেন লতা মঙ্গেশকর। নিজের সংসার পাতেননি। খালিদ মহম্মদকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে মনের কথা বলেছিলেন লতা মঙ্গেশকর।

আজীবন কুমারী থাকলেন, একাকীত্ব ঘিরে ধরেনি? তিনি এই প্রশ্নের উত্তরে জানান, একমাত্র আমার মা আমার বিয়ে নিয়ে জোরাজুরি করতেন, একসময় তিনিও হাল ছেড়ে দেন। আমার কাছে আমার পরিবার বিয়ের চেয়ে বেশি জরুরি ছিল। কিন্তু এমনটা অস্বীকার করব না যে আমাকে কোনওদিন একাকীত্ব ঘিরে ধরেনি, তাহলে তো আমি মানুষই হতাম না। বিবাহিত হোন কিংবা সিঙ্গেল, একাকীত্ব সবার জীবনে আছে। কখনও কখনও এই একাকীত্ব ক্ষতিকারক হয়, তবে আমি বলব আমি খুব সৌভাগ্যবান যে ভালোবাসার মানুষরা আমার আশেপাশে সবসময় থেকেছে।

কোনোদিন প্রেমে পড়েননি এমন প্রশ্নের জবাবে মুচকি হেসে লতা মঙ্গেশকর জবাব দিয়েছিলেন, হ্যাঁ পড়েছি তো, তবে শুধু নিজের কাজের সঙ্গে। আর আমি ভালোবেসেছি আমার আপনজনদের, আমার পরিবারকে, আর কাউকে নয়।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *